Print Friendly, PDF & Email

 

এডওয়ার্ড ইভান্স প্রিচার্ড ব্রিটিশ ক্রিয়াবাদী ধারার অন্যতম একজন গুরুত্বপূর্ণ তাত্ত্বিক। তিনি আফ্রিকান বিভিন্ন সমাজ (নুয়ার,আজান্দে) সম্পর্কে অধ্যয়ন করেছিলেন। এই সমাজগুলোতে প্রচলিত অনেক আগ্রহ উদ্দীপক বিষয়কে তুলে ধরেছেন তার কাজসমূহে। কর্মজীবনের প্রথম দিকে তিনি ‘কাঠামোগত ক্রিয়াবাদ’ পদ্ধতি অনুসরণ করলেও পরবর্তীতে তিনি তাঁর কাজগুলোতে পদ্ধতিগত পরিবর্তন আনেন।

তাঁর একটি আগ্রহ উদ্দীপক কাজ হলো আজান্দে সমাজের ডাকিনীবিদ্যা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা উপস্থাপন।  তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ ‘Witchcraft, Oracles and magic among the Azande’ – বইটিতে তিনি এই বিষয়টিতে আলোকপাত করেন। এ সংক্রান্ত একটি প্রচ্ছন্ন তত্ত্বও নৃবৈজ্ঞানিক আলোচনায় যুক্ত হয়েছে যার নাম ‘Theory of Accountability’

আজান্দে সমাজে যে কোন অভাগ্য,দুর্ঘটনার জন্য সচরাচর ডাকিনীবিদ্যাকে দোষারোপ করা হতো। বিষয়টি এমন নয় যে কোন দুর্ঘটনার কারন সম্পর্কে সেই সমাজের মানুষ অবহিত নন। তারা দুর্ঘটনার সম্ভাব্য কারণ সম্পর্কে মোটামুটিভাবে অবহিতই থাকেন। উদাহরণ হিসেবে ধরা যাক, একটি শস্যগোলা কারো উপর ভেংগে পড়লো। এখন একজন আজান্দে ঠিকই জানেন যে শস্যগোলা অনেক কারণেই ভেংগে পড়তে পারে যেমন: ঘুনপোকা শস্যগোলার খুটি দুর্বল করে দিতে পারে, অনেক পুরোনো হয়ে যাওয়ার কারনে কাঠ নিজেই দুর্বল হয়ে যেতে পারে বা অত্যাধিক শস্যের ভার বইতে না পেরে সেটি ধ্বসে যেতে পারে। অর্থাৎ শস্যগোলা যে অসংখ্য কারনে ভাংতে পারে এটি তারা জানেন কিন্তু তারা বিষয়টিকে এভাবে দেখেন- যে ব্যক্তি এই ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তিনি যখন শস্যগোলার নিচে অবস্থান করছিলেন ঠিক তখনই কেন গোলাটি ধ্বসে পড়লো? অন্য কোন সময়েও তো গোলাটি ধ্বসে পড়তে পারতো কিন্তু সেটি কেন ঘটলো না?

এইরকম পরিস্থিতিতে  আজান্দে সমাজের মানুষ ধারনা করে নেন যে কোন ডাকিনী তার জাদুবিদ্যা দ্বারা এই ঘটনা ঘটাতে পারে। এখন এটি শুধুমাত্র অনুমান মাত্র। এই অনুমানের সঠিকতা যাচাইকরনে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি ওঝার (Oracle) কাছে যায়। ওঝা আবার একটি নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে এই বিষয়টিকে যাচাই করেন।

দুর্ঘটনার সাথে কোন ডাকিনীর সম্পৃক্ততা আছে কিনা, এই বিষয়টি জানার জন্য ওঝা একটি মুরগীর বাচ্চাকে বিষ প্রদান করেন। যদি বিষ প্রয়োগে মুরগীর বাচ্চাটির মৃত্যু ঘটে তবে ধরে নেয়া হয় বিষয়টিতে ডাকিনী সম্পৃক্ততা রয়েছে। অন্যদিকে যদি বিষ প্রয়োগে মুরগীর বাচ্চার মৃত্যু না ঘটে তবে ধরে নেয়া হয় এই ঘটনাটি নিছক কাকতালীয় ভাবেই ঘটেছে। বাইরের কোন প্রভাব এখানে বিদ্যমান নয়।

প্রশ্ন হলো, বিষ প্রয়োগে মুরগীর বাচ্চার মৃত্যু ঘটবে, এমনটাই তো স্বাভাবিক। কিন্তু ইভান্স প্রিচার্ড লক্ষ করেন যে, সবক্ষেত্রে তা ঘটেনা। এর কারন হিসেবে তিনি বলেছেন এখানেও নানা ধরনের কুটকৌশলের বিষয় রয়েছে। যেমন, ওঝা যদি সত্যিকারের বিষ প্রয়োগ না করেন বা অন্য কোন ছল চাতুরির আশ্রয় নেন, সাধারণ মানুষের হাতে সেটি বুঝবার কোন উপায় থাকেনা। আবার অনেক ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত শত্রুতা, নিজেদের মধ্যকার রাজনীতি ইত্যাদি কারনে ওঝা’দের উৎকোচ প্রদানের মাধ্যমে সম্পূর্ন বিষয়টিকে নিয়ন্ত্রণের ঘটনাও ঘটে থাকে।

মুলত, আজান্দে সমাজের উপর প্রিচার্ড যে গবেষণা করেছেন তার খুব অল্প কিছুই উক্ত লেখায় উঠে এসেছে। ইভান্স প্রিচার্ড আফ্রিকান সমাজ নিয়ে যে কাজ করেছেন তা অত্যন্ত ব্যাপক এবং নৃবিজ্ঞানে এই গুরুত্ব অত্যন্ত বেশি।

গ্রন্থাবলি

  • Pritchard, E E Evans; Witchcraft, Oracles and magic Among the Azande. (1937) Oxford University Press.
  • Moore, Jerry D; Visions of Culture (2003). Altamira Press.

……………………………………..

লেখক: আসিফ রহমান, শিক্ষার্থী, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। 

[লেখার সকল দায়বদ্ধতা লেখক নিজে সংরক্ষণ করবেন।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here