সংকটে ফ্রান্স:
অফিসিয়াল ও আনঅফিসিয়াল খ্রিস্টান ফ্রান্সের আমূল উগ্রপন্থা ফ্রান্স ও ফ্রান্সের বাইরের মুসলিমদের উপর ক্রমাগত আক্রমণ করে যাচ্ছে এবং এটাকে তারা সেকুলারিজমের ছাতার নিচে বৈধতা দিচ্ছে।
কালেক্টিভ এগেইনস্ট ইসলামোফোবিয়া ইন ফ্রান্স (সিসিআইএফ) নামক একটা সংগঠন ২০১৯ সালে ফ্রান্সে ১০৪৩ টি ইসলামোফোবিক ঘটনা তালিকাভূক্ত করেছে (২০১৭ থেকে এটা ৭৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে)। এর মধ্যে ছিল ৬৮ টি শারীরিক আঘাত(৬.৫%), ৬১৮ টি বৈষম্যের ঘটনা (৫৯.৩%), ২১০ টি হেইট স্পিচ ও বর্ণবাদী ঘৃণার ঘটনা (২০.১%), ৯৩ টি অপমানের ঘটনা (৮.৯%), ২২ টি মুসলমানদের পবিত্র স্থাপনা ভাংচুরের ঘটনা (২.১%), সন্ত্রাস বিরোধী যুদ্ধ সংক্রান্ত ৩২ টি বৈষম্যের ঘটনা (৩.১%)।
মুসলিম বিরোধী ঘৃণাবাদ ফরাসি খ্রিস্টান এবং তথাকথিত ‘সেকুলার’ সরকার, পন্ডিত ও মিডিয়ার প্রতিদিনকার বক্তব্যের অংশ।
প্রকৃতপক্ষে মুসলিমবিরোধী হেইট স্পিচের স্বাভাবিকরণ কেবল মুসলিমদের প্রতি প্রাতিষ্ঠানিক বৈষম্যকেই বৈধতা দিচ্ছে না, বরং ফ্রান্সের ভিতরে এবং বাইরে মুসলিম বিরোধী সহিংসতাকেও উস্কে দিচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে ২০১৯ সালের জুনে ব্রেস্টের মসজিদে ও মসজিদটির বহুল জনপ্রিয় ইমাম রশিদ ইলযাইকে টার্গেট করে গুলিবর্ষণ ও ২০১৯ এর অক্টোবরে বায়োনের মসজিদে আক্রমণ, যে ঘটনায় চারজন আহত হয়েছিল।
ফ্রান্সের বাইরে নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের মসজিদে যে সন্ত্রাসী ম্যাসাকার চালিয়ে ৫১ মুসল্লীকে হত্যা ও ৪৯ জনকে আহত করেছিল সে ফ্রান্সের ইসলামবিদ্বেষী খুনে চিন্তক রনেঁ কামুর থিওরির উদ্ধৃত করেছিল।
২০১৯ এর অক্টোবরে প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ (যার নামের প্রথম অংশ গসপেলে ফেরেস্তা জিবরাঈল যে নাম ঈসাকে দিয়েছিলেন, যার অর্থ ইশ্বর আমাদের সাথে রয়েছেন) এবং তার তৎকালীন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী ক্রিস্টফ ক্যাস্টেনার (তারও খ্রিস্টের নামে নাম) সন্ত্রাসবাদকে ফ্রান্সের মুসলিমদের সংস্কৃতি ও বিশ্বাসের যেকোনো প্রতিকের সাথে সম্পর্কিত করে দেখান। এর মধ্যে রয়েছে দাড়ি রাখা, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া, হালাল খাবার খাওয়া ইত্যাদি।
এটা একেবারেই কাকতাল যে প্রেসিডেন্ট ও মন্ত্রীর জিসু খ্রিস্টের নামে নাম, এটা দিয়ে বুঝানোর সুযোগ নাই যে যাদের খ্রিষ্টের নামে নাম তাদেরই ইসলামের সাথে সংকট রয়েছে, বরং তাদের কারো কারো, যারা মুসলিমবিদ্বেষী ‘সেকুলার’ ঘৃণাবাদ ছড়ায়।
ইসলামকে ‘উদ্ধার করা’
গত সপ্তাহে ম্যাখোঁ বলেছিলেন ইসলাম এমন একটা ধর্ম যেটা কেবল আমাদের দেশেই নয় বরং সারা পৃথিবীতেই সংকটে রয়েছে। সে আরও বলে যে ফ্রান্সে মসজিদে অর্থায়নে নজরদারি বৃদ্ধির মাধ্যমে বিদেশী প্রভাব থেকে ইসলামকে সে উদ্ধার করতে চায়।
কিন্তু ম্যাখোঁই প্রথম প্রেসিডেন্ট নয় যে ইসলামকে উদ্ধারে প্রয়াসী হয়েছেন।
এটা ফ্রান্সের একটা পুরাতন সেকুলার ঐতিহ্য। ১৭৯৮ সালে যখন নেপোলিয়ন বেনাপোর্ট মিশর ও ফিলিস্তিন দখল করে তখন তার ধূর্ত কৌশল ছিল মিশরীয়দের এই বলে মিথ্যাচার করা যে সে এবং তার সেনবাহিনী ইমানদার মোসলমান। এবং তারা মিশরে এসেছে ইসলাম ও মোসলমানদের অত্যাচারী মামলুক শাসকদের হাত থেকে উদ্ধার করার জন্য।
তার এই প্রতারণা শেষ পর্যন্ত কাজে দেয়নি, ফিলিস্তিনি ও মিশরীয়রা তার বিরুদ্ধে জেগে উঠেছিল। তার সেনাবাহিনী মিশর ও ফিলিস্তিনে অবর্ণনীয় নৃশংসতা সংগঠিত করে পরাজিত হয়ে ফ্রান্সে ফিরে এসেছিল। তিন দশক পর যখন ফ্রান্স আলজেরিয়া দখল করে তখন মোসলমানদের বাগে আনার জন্য মিথ্যাচার করার প্রয়োজন পড়েনি, বরং ডাকাতি ও মোসলমানদের পবিত্র স্থাপনাগুলো ধ্বংস করার নীতি নিয়েছিল।
১৮৩০ সালে কিং চার্লস দশম আলজেরিয়া দখল করাকে ন্যায়সঙ্গত করার জন্য যে দাপ্তরিক কারণ দেখিয়েছিলেন সেটি ছিল প্রথম প্রজাতন্ত্রের অধীনে ইতালি অভিযানের সময় নেপোলিয়নের সেনাবাহিনীকে আলজেরীয় বণিকরা খাদ্যশষ্য সরবরাহ বাবদ যে ঋণ দিয়েছিলেন সেটি ফেরত দিতে অস্বীকার করা। আলজেরীয় বণিকরা ছিলেন বাকরি এবং বুসনাকের লিভর্নো ইহুদি ব্যাংকিং পরিবার থেকে আসা। ফ্রান্সে সেই সময় পাবলিক ডিবেটে বিরাজ করছিল ইহুদি বিদ্বেষী প্রবণতা।
হাস্যকরভাবে, এই একই কিং চার্লস ১৮২৫ সালে হাইতির মুক্ত দাসদের, যারা বিপ্লব করে ফরাসি উপনিবেশবাদ এবং দাসত্বকে উৎখাত করেছিল, তাদের পূর্ববর্তী শেতাঙ্গ ফরাসি কর্তাদের সম্পত্তি ক্ষতির জন্য লক্ষ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য করেছিল, যারা হাইতিকে ফ্রান্সের কূটনৈতিক স্বীকৃতি এবং হাইতির উপর আরোপ করা অবরোধ তুলে নেওয়ার বিনিময়ে তাদের দাস বানিয়েছিল।
১৮২৭ সালে, অটোমান আলজিয়ার্সের শাসক হুসেন দে ফরাসি কনসাল পিয়েরে দেভালের কাছে ঋণ পরিশোধের দাবি করলে কনসাল ঔদ্ধত্যের সাথে তা অস্বীকার করে। কনসালের অহংকারী প্রতিক্রিয়ায় উত্তেজিত হয়ে দে তাকে উড়ানি দিয়ে আঘাত করেছিলেন এবং তাকে “দুষ্ট, অবিশ্বাসী, মূর্তি-পূজারী, বদমাশ” বলে অভিহিত করেছিলেন।
আলজেরিয়া আক্রমণ
দখল অভিযান শুরু হয়েছিল ১৮৩০ এর মধ্য জুনে আর আলজেরিয়ার পতন হয়েছিল ৫ জুলাই। আর্থিকভাবে সংকটে থাকা ফ্রান্স অ্যালজিয়ার্সের কোষাগার পুরা সাফ করে ফেলে। যে পরিমাণ সম্পদ গায়েব হয়ে যায় এবং ফরাসি দখলদার সেনার পেছনে যে অর্থ ব্যয় হয় সেগুলি বাদ দিয়ে সোনা ও রূপা চুরির পরিমাণ ছিল ৪৩ মিলিয়ন ফ্রাঙ্ক। সম্ভবত পশ্চিম আফ্রিকার দরিদ্র দেশগুলো যারা ক্রমাগত ফ্রান্সের কাছে ঋণী হয়ে যাচ্ছে তাদের উচিত তারা কতটুকু ফরাসি হয়ে উঠেছে তা কোষাগার লুট করার জন্য ফ্রান্সকে আক্রমণ করে প্রমাণ করা।
আক্রমণের প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল, যেমন ২ মার্চ কিং চার্লস ন্যাশনাল এসেম্বলিতে এগুলোকে গণনা করেছিলেন, আলজেরীয়দের দ্বারা ফরাসিদের অপমানের প্রতিশোধ, “জলদস্যুতার অবসান এবং আলজেরিয়াকে খ্রিস্টানিটির জন্য পুনরুদ্ধার করা।”
ফ্রান্সের খ্রিস্টীয় কমিটমেন্ট অনুসারে বিজয়ী ফরাসি সেনাবাহিনী আলজেরীয় মসজিদগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বন্দুকের নলের মুখে সেগুলোকে চার্চ এবং ক্যাথেড্রালে পরিণত করে। এর মধ্যে ছিল ১৬১২ সালে নির্মিত আলজিয়ার্সের বৃহত্তম অটোমান কেতচৌয়া মসজিদ, ১৮৩২ সালের ডিসেম্বরে মসজিদটিকে সেন্ট ফিলিপ ক্যাথেড্রালে পরিণত করা হয়।
একই বছর ফরাসিরা পুরো ওফিয়াস গোত্রকে নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছিল, কোনও মহিলা বা শিশুকেও তারা ছাড়েনি এবং তাদের সমস্ত সম্পত্তি দখল করেছিল।
সমসাময়িক শেতাঙ্গ ফরাসি খ্রিস্টান আধিপত্যবাদী বুদ্ধিজীবীদের চরম মুসলিম বিদ্বেষ এবং বর্ণবাদের মত ১৮৪০ এর দশকের গোড়ার দিকে খ্যাতনামা ফরাসি চিন্তাবিদ আলেকসিস ডি টকভিল এই প্রসঙ্গে ঘোষণা করেছিলেন যে “এটি সম্ভব এবং প্রয়োজনীয় যে আফ্রিকায় দুই সেট আইন থাকবে, কারণ আমরা ওখানে দুটি স্বতন্ত্র পৃথক সমাজের মুখোমুখি হই। যখন কেউ ইউরোপীয়দের সাথে [আফ্রিকার উপনিবেশিক-বসতি স্থাপনকারীদের) সাথে কথা বলছেন তখন একেবারে কিছুই আমাদের সাথে তাদের এমন আচরণ করা থেকে বিরত করে না যে যেন তারা একা ছিল; তাদের জন্য প্রণীত আইনগুলি কেবলমাত্র তাদের জন্যই প্রয়োগ করা উচিত।”
আলজেরীয় জনগণের বিরুদ্ধে ফরাসি বর্বরতা এবং তাদের বিজয় অভিযানের যারা বিরোধিতা করেছিল তাদের নিস্তেজতা নিয়ে আপত্তি তুলেছিলেন তিনি। “আমি প্রায়ই শুনি কিছু মানুষ, যাদের আমি শ্রদ্ধা করি কিন্তু তাদের সাথে একমত নই, আমরা যে ফসল পুড়িয়ে দিচ্ছি, জমি খালি করে ফেলছি, এবং সবশেষে নিরস্ত্র নারী-পুরুষ শিশুদের আটক করছি এগুলোকে অন্যায় মনে করেন। এগুলি আমার দৃষ্টিতে দুঃখজনক প্রয়োজনীয়তা, তবে আরবদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে চাইলে যে কোনও লোক এগুলা মেনে নিতে বাধ্য। এবং, আমি যদি এই ব্যাপারে আমার মনের কথা বলি তাহলে বলতে হয় এই কাজগুলো আমার মনকে আর বিদ্রোহী করে তুলেনা যে, যুদ্ধের নীতি স্পষ্টতই এগুলোর অনুমোদন দেয় এবং যা ইউরোপের সমস্ত যুদ্ধে সংঘটিত হয়।”
ফরাসি বর্বরতা
১৮৭১ সালে আলজেরিয়ার মোসলমানরা ফরাসি শাসনের বিরুদ্ধে স্থানীয় গোত্র নেতা আল মুকরানির নেতৃত্বে বিদ্রোহ করে। এতে ১৫০০০০ মানুষ যোগ দেয়।
ফরাসি গণহত্যা মেশিন এতে সাড়া দিয়েছিল হাজারে হাজারে লোককে হত্যা করে। ১৮৬০ সালে হওয়া ফরাসি-সৃষ্ট দুর্ভিক্ষসহ মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছিল ১০ লাখ (জনসংখ্যার প্রায় এক তৃতীয়াংশ)। ফরাসিরা ডজনে ডজনে গ্রাম ও শহর মাটির সাথে মিশিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু এরপরও ইসলামের সাথে ফ্রান্সের সংকট দূর হয়নি।
১৯০১ সালে ইসলাম বিষয়ক ‘সংকট’ নিয়ে তাদের উদ্বেগ আরও বেড়ে যায়। বিংশ শতাব্দীতে ইসলামের অবস্থা কেমন হবে তা জানা ফ্রান্সের জন্য দরকারী হয়ে পড়ে।
এটা এতটা গুরুতর উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছিল যে উপনিবেশিক জ্ঞানের জন্য ‘অনুসন্ধান’ জারি করা হয়েছিল। উপনিবেশি ফ্রান্সের একটা গুরুত্বপূর্ণ জার্নাল ডিপ্লোমেটিক এন্ড কলোনিয়াল ইস্যুজ -এর সম্পাদক এডমন্ড ফ্যাজি ২০০০ সাল নাগাদ ‘ইসলামের ভবিষ্যত’ এর প্রশ্ন নিয়ে অনুসন্ধান শুরু করেন।
ইসলামের ভবিষ্যৎ
আজ অনেক ইসলামবিদ্বেষী ফরাসি খ্রিস্টানদের মত, ফ্যাজি বিশ্বব্যাপী মুসলমানদের ক্রমবর্ধমান ও অপ্রত্যাশিত সংখ্যা (তিনি ৩০০ মিলিয়ন উদ্ধৃত করেন, যেটা বিশ্বের মোট জনসংখ্যার এক পঞ্চমাংশ ছিল) এবং আফ্রিকায় তাদের প্রচারিত “সরল” ধর্মের ব্যাপারে চিন্তিত ছিলেন।
তাঁর (ফ্যাজি’র) জার্নালে প্রদায়কদের অনেকেই ইসলামী ধর্মতত্ত্ব পরিবর্তন ও মুসলিম উলামাদের রুপান্তরিত করে কেবল এমন এক আধুনিক ইসলামই তৈরি করতে চাননি যা ইউরোপীয় আধুনিকতাকে গ্রহণ করবে, বরং তারা আশা করেছিল যে এটা উসমানীয় সাম্রাজ্যকেও দুর্বল করে দেবে।
তবে সবচেয়ে প্রায়োগিক পরামর্শটি এসেছিল উত্তর আফ্রিকায় ফরাসী উপনিবেশিক বসতি স্থাপনকারীদের (পিডস নয়ার্স) দ্বারা নিযুক্ত ফ্রেঞ্চ স্কুল অব এরাবিস্টস থেকে। এর মধ্যে একজন ছিলেন আলজেরিয়ান স্কুলের ধর্ম ও ইসলাম বিশেষজ্ঞ এডমন্ড দ্যুতে। তিনি মুসলিম ধর্মান্ধতা এবং অসহিষ্ণুতার সাথে মুখোমুখি হওয়ার কথা বলেছিলেন।
প্রথাগতভাবে শিক্ষিত মুসলমানরা মনে হয় দেশীয় কর্মীদের তুলনায় “আমাদের থেকে দূরে সরে গেছেন”, যারা কলোনিগুলির সাথে ভ্রাতৃসংশ্লিষ্ট এবং “আমাদের অভ্যাস” আয়ত্ত করে নেয়। প্রচলিত ইসলামের “অতিরঞ্জিত ধর্মীয় প্রকাশ” দমন করার চেয়ে ইউরোপীয়দের কাছে কাজটি ছিল আরও ফলদায়ক।
“বিপরীতে, আমরা ইউরোপের সমঝোতা ও সহনশীলতার দিকে আরো ঝুঁকে পড়া নতুন এক ইসলাম সৃষ্টির পক্ষে থাকতে পারি; এজন্য এ বিষয়ের সাথে যুক্ত উলামাদের তরুণ প্রজন্মকে উত্সাহিত করা এবং মসজিদ, মাদ্রাসা ও মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের সংখ্যা বৃদ্ধি করে এটি নিশ্চিত করা যে আমরা তাদেরকে নতুন তত্ত্বের অনুসারী করে রাখতে পেরেছি।”
দ্যুতের মন্তব্যগুলি খুবই পরিচিত মনে হয় কারণ সমসাময়িক ফরাসী – বা অন্য পাশ্চাত্য – রাজনীতিবিদ বা পন্ডিতরা এগুলা খুব সহজেই উচ্চারণ করেন।
আলজেরিয়ার মুসলিম বিচারকদের “যৌক্তিকতার” গ্রাউন্ডে প্রশিক্ষণ দেয়ার জন্য ফরাসিদের দ্বারা স্থাপিত ট্লেমসেন মাদ্রাসার পরিচালক এম উইলিয়াম মাখেই “নতুন” এবং “আধুনিক” ইসলামের পক্ষপাতি ছিলেন যে ইসলামের লক্ষ্য ফরাসিদের পরিণতির সাথে নিবিড়ভাবে যুক্ত।
প্রতিদানের সময়
২০২০ সালেও ইউরোপীয় খ্রিস্টান ও ফরাসী সেকুলারিজমকে সহ্য করতে পারে এমন কিছুতে ইসলামকে রুপান্তরিত করার প্রকল্পটি অব্যাহত রয়েছে। তবে অসন্তোষজনক ফলাফল নিয়ে ম্যাখোঁ যতটা উদ্বিগ্ন, বিশেষত সিরিয়ায় ফ্রান্সের জিহাদী গ্রুপগুলোকে তহবিল সরবরাহ, ইসলামের কাছে ফ্রান্স যা প্রত্যাশা করে তা এনে দিতে পারেনি।
ফ্রান্সে মুসলিম নাগরিকদের বিরুদ্ধে চলমান প্রাতিষ্ঠানিক বৈষম্য ম্যাখোঁর অধীনে হ্রাস পাওয়ার কোন লক্ষণ দেখা যায় না। ফ্রান্স আজও উগ্র জাতীয়তাবাদ এবং বিদ্বেষের এক প্রভাবশালী ডিসকোর্সে নিমজ্জিত রয়েছে যা এমনকি ফরাসি বিপ্লবের আগেও ফরাসি সংস্কৃতিতে সর্বদা শক্তিশালী ভাবে বিদ্যমান ছিল।
এটা সত্য যে সর্বব্যাপী শেতাঙ্গ খ্রিস্টান আধিপত্যবাদী এবং ফ্যাসিবাদী ঘৃণার সংস্কৃতি যা আজ আমেরিকা ও ইউরোপজুড়ে বিরাজ করছে তা ১৯৩০’র দশকের ঘৃণার সংস্কৃতির স্মারক। এটা একচেটিয়াভাবে কেবল ফ্রান্সের ক্ষেত্রেই নয়, তবে ফরাসিরা (ইসরায়েলিরাও এর বিপরীতে নয়) এটি ন্যূনতম ব্যঞ্জনা দ্বারা প্রকাশ করতে পারদর্শী।
যে সংকট নিয়ে ফ্রান্স অব্যাহতভাবে মুসলিমদের সাথে মুখোমুখি হচ্ছে তা মূলত উগ্র ফরাসি জাতীয়তাবাদ ও শেতাঙ্গ খ্রিস্টান আধিপত্যবাদকে অস্বীকার এবং সমসাময়িক ফরাসিদের নিজেদের দেশকে চিনতে না পারার সংকট যে, তাদের দেশটি একটি পশ্চাৎপদ সংস্কৃতির প্রভাবশালী তৃতীয় শ্রেণীর নব্যউপনিবেশী শক্তি যা অতীত গৌরবকে আঁকড়ে ধরতে জোরারোপ করে। যে সময় তাদের উচিত ছিল ক্যারিবীয় থেকে পূর্ব এশিয়া থেকে আফ্রিকা জুড়ে ১৮শ শতক থেকে চালানো গণহত্যার পাপের জন্য অনুশোচনা করা, যাতে কয়েক মিলিয়ন লোককে হত্যা করা হয়েছিল।
ফরাসিদের যা করা দরকার তা হ’ল তারা সেই সমস্ত লোককে তাদের ঋণ পরিশোধ করে দেয়া যাদের তারা বিশ্বজুড়ে লুট করেছিল এবং হত্যা করেছিল। কেবলমাত্র এটিই “ইসলাম” এবং নিজের সাথে ফ্রান্সের সংকটের ইতি টানবে।
লেখক: যোসেফ মাসাদ, নিউইয়র্কের কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে মডার্ন আরব পলিটিক্স এন্ড ইন্টেলেকচুয়াল হিস্ট্রির অধ্যাপক। ৭ অক্টোবর ২০২০ middleeasteye.net এ প্রকাশিত তার France’s ‘crisis’ with Islam: A legacy of 200 years of colonial brutality লেখাটির অনুবাদ।অনুবাদক: হাসান আল মাহমুদ, সাবেক শিক্ষার্থী, নৃবিজ্ঞান, জাবি।