Print Friendly, PDF & Email

এরিখ উলফ (Eric Robert Wolf) একজন বিখ্যাত মার্ক্সবাদী নৃবিজ্ঞানী। তিনি ১৯২৩ সালের ১লা ফেব্রুয়ারি অষ্ট্রিয়ার ভিয়েনায় জন্মগ্রহণ করেন। কৃষক সমাজ অধ্যয়নের জন্য তিনি সমধিক পরিচিত। তিনি একটি ইহুদি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন; যদিও তিনি তার পরিবারকে “বিধর্মী” বলে পরিচিত করতেন। তিনি বলতেন, যখন তিনি বড় হচ্ছিলেন তখন ইহুদি সম্প্রদায়ের সাথে তার যোগাযোগ খুবই কম ছিলো। তার বাবা কর্পোরেশনে চাকরি করতেন। তার মা রাশিয়ায় মেডিসিন নিয়ে পড়াশোনা করেছেন। তিনি নিজের মা কে নারীবাদী বলে দাবী করতেন। ১৯৩৩ সালে বাবার চাকরির কারণে পরিবারের সাথে উলফ স্লোভাকিয়া চলে যান। সেখানে থাকাকালীন তিনি চারপাশের শ্রেণী, জাতিসত্ত্বা এবং রাজনৈতিক ক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন শুরু করেন। ১৯৩০ সালে ভিয়েনায় সংগঠিত সামাজিক বিভাজন এবং আঞ্চলিক সংঘর্ষ তার পরবর্তী কাজগুলোকে প্রভাবিত করেছিল। তিনি ১৯৯৯ সালের ৬ মার্চ নিউ ইয়র্কের আরভিংটনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

শিক্ষা জীবন ও অবদানঃ

উলফ এসেক্সের (essex) ফরেস্ট স্কুলে ২ বছর পড়াশোনা করেছেন। এখানেই তিনি ইংরেজি শিখেছেন এবং বিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহী হয়েছিলেন। ইংল্যান্ড ত্যাগ করা তাকে সংস্কৃতির ভিন্নতাকে সম্পূর্ণ নতুনভাবে দেখতে সাহায্য করেছে।

১৯৪০ সালে তাকে ইংল্যান্ডের লিভারপুলের হাইঠোনে অবস্থিত ডিটেনশন ক্যাম্পে করানো হয়। ডিটেনশন ক্যাম্পের অতিরিক্ত চাপ ও পরিবেশ তাকে সমাজতন্ত্র (সোশ্যালিজম) এবং সাম্যবাদের (কমিউনিজিম) সম্পর্কে চিন্তাভাবনাকে বিকশিত করতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবক হিসেবে ভূমিকা রাখে। ক্যাম্পের ভেতরে বুদ্ধিজীবীদের দ্বারা আয়োজিত বিভিন্ন আলোচনা সভা-সেমিনারের মাধ্যমে তিনি সামাজিক বিজ্ঞানের পরিধি ও বিভিন্ন দিক সম্পর্কে জানতে পারেন। সে সব বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন জার্মান সমাজবিজ্ঞানী নর্বার্ট ইলিয়াস। এরিক উলফ তার দ্বারা বিশেষভাবে প্রভাবিত ছিলেন।

১৯৪০ সালে উলফ আমেরিকায় চলে আসেন। তিনি নিউইয়র্কের কুইন্স কলেজে (Queens college) ভর্তি হন। এখানেই উলফ নৃবিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহী হন এবং এরপর তিনি কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নৃবিজ্ঞানে পড়াশোনা করেছিলেন। ১৯৪১ সালে তিনি টেনেসি (Tennesse) এর Highlander Folk school এ গ্রীষ্মকালীন স্কুলে যোগ দেন। নিউইয়র্ক থেকেও এখানে সময় কাটিয়ে উলফ আমেরিকার আরেকটি ভিন্ন দিক বেশি দেখতে পান।

সামরিক বাহিনীর একজন সদস্য হিসেবে উলফ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধেও অংশগ্রহণ করেন। তিনি মার্ক্সবাদী ধারা দ্বারা বিশেষভাবে প্রভাবিত ছিলেন।

Europe and The People Without History (1982) তার বিখ্যাত প্রকাশনাগুলোর একটি। এ বইতে তিনি মূলত পুরো পৃথিবীর আন্তঃ সম্পর্ক দেখাতে চেয়েছিলেন। পুঁজিবাদী উৎপাদন ব্যবস্থা (ক্যাপিটালিস্ট মোড অব প্রোডাকশন) কীভাবে অন্যান্য উৎপাদন ব্যবস্থায় (মোড অব প্রোডাকশন) অনুপ্রবেশ করেছে সেটা দেখানোর চেষ্টা করেছেন তিনি। উলফ বলেন, পুরো পৃথিবীর মধ্যে আন্তঃসম্পর্ক ছিলো। কোনো দেশ কখনো বিচ্ছিন্ন ছিলোনা। এই বইয়ের কেন্দ্রবিন্দু হলো কীভাবে ইউরোপীয় সমাজ আধুনিক যুগে বিস্তার লাভ করে।

এই বইটি বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে লেখা অন্যতম পাঠ্য হিসেবে বিবেচিত। এ বইতে বর্ণনা করার চেষ্টা করা হয়েছে বিভিন্ন সম্প্রদায় ও অঞ্চলের মানুষজন এবং জাতির মধ্যকার সম্পর্ককে বিভিন্ন লেখালেখিতে যেভাবে বিচ্ছিন্ন হিসেবে বিবেচনা করা হয়- সে ধ্যানধারণাকে খারিজ করে দেয় । Europe and The People Without History’র মাধ্যমে এরিক উলফ নৃবিজ্ঞানে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন।

প্রকাশনা:

  • ‘Types of Latin American Peasantry: A Preliminary Discussion’, American Anthropologist, Vol.57, No.3. (1955)
  • ‘San José: Subcultures of a “Traditional” Coffee Municipality’, in Julian H. Steward, et al. The People of Puerto Rico: A Study in Social Anthropology, Urbana, IL: University of Illinois Press. (1956)
  • Wolf, E.R., 1957, ‘Closed Corporate Communities in Mesoamerica and Java’, Southwestern Journal of Anthropology, Vol.13, No.l. (1957)
  • Peasants, Englewood Cliffs, NJ: Prentice Hall (1966)
  • Peasant Wars of the Twentieth Century. London: Faber & Faber,(1969).
  • ‘Peasant Rebellion and Revolution’, in Norman Miller and Rod Aya (eds.), National Liberation: Revolution in the Third World, New York: The Free Press (1971).
  • ‘American Anthropologists and American Society’, in Dell Hymes (ed.), Reinventing Anthropology, New York: Pantheon Books (1972).
  • Europe and the People Without History, Berkeley, CA: University of California
  • Press (1982).

………………………….

হুমায়রা মিমি

শিক্ষার্থী (অনার্স)

নৃবিজ্ঞান বিভাগ

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here