[MDPI ব্লগে প্রকাশিত Katherine Bosworth এর লিখিত Early Career Researcher Advice: 10 Things to Avoid এই শিরোনামের প্রবন্ধটি AnthroBD’র পাঠকদের জন্য ভাষান্তর করেছেন শান্ত-মারিয়াম ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি’র সামাজবিজ্ঞান ও নৃবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মিমযায়ি তাসনিম সাদিয়া রাফি।]
আমাদের লেখকদের কাজ এবং জীবনধারা উন্নত করতে সাহায্য করার জন্য আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আর এর একটি বড় অংশই হলো যারা কর্মজীবনে গবেষক হিসেবে কেবল যাত্রা শুরু করেছে, তাদের জন্য পরামর্শ প্রদান করা- যা তাদের সাহায্য করবে বলে আমরা মনে করি। একাডেমিয়াতে যারা কর্মজীবন শুরু করেছে, এই বিষয়টি তাদের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। গবেষণা ক্যারিয়ারের প্রাথমিক পর্যায়টি [ক্যারিয়ারের] সামগ্রিক চিত্রকে সাজাতে সাহায্য করে এবং তরুণ শিক্ষাবিদদেরকে সামনে কি হতে চলেছে, সেটার জন্য প্রস্তুত করে। এজন্য আমাদের কি করতে হবে এবং কোন বিষয়গুলো এড়িয়ে চলতে হবে সে সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা দরকার।
নতুন গবেষকদের তাদের প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়ার জন্য আমরা আমাদের একাডেমিক প্রকাশনার ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে আন্তরিক পরামর্শসহ একটি সিরিজ নিবন্ধন তৈরি করেছি।
কর্মজীবনে প্রাথমিক পর্যায়ের গবেষকদের জন্য পরামর্শ: যে বিষয়গুলো এড়িয়ে চলতে হবে–
এই নিবন্ধে আমরা কর্মজীবনে প্রথম দিককার গবেষকদের জন্য আমাদের সবচেয়ে ‘না করা’ বা এড়িয়ে চলা বিষয়গুলোর দিকে আলোকপাত করবো। সর্বোপরি, একাডেমিয়ায় আমাদের নতুনদের দ্বারা করা শীর্ষ ভুলগুলোকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। নিম্নে যে কাজগুলো করা যাবেনা তা আলোচনা করা হলো–
১. প্লাজিয়ারিজম বা অন্যের লেখা চুরি না করা:
একাডেমিয়ায় অন্যের, এমনকি নিজের কাজও কপি/নকল করা যাবে না। এটি করলে গবেষণা পত্রিকায় আপনার কাজ বাতিল করা হবে। নকল করলে এটি প্রতিষ্ঠানে আপনার পদ স্থগিত, প্রোবেশন বা [নিজ কাজের] সত্যতা প্রমাণ করা এবং এমনকি [সেটি নিজের কাজ প্রমাণ না করতে পারলে] আপনার চাকরিচ্যুতিও হতে পারে। তাই এটি শুধুমাত্র ঝুঁকির সমানই নয়।
২.শক্তির অপচয় না করা:
গবেষকরা সবসময় নিজেদেরকে সচল রাখার জন্য অধিক চাপের মধ্যে থাকেন, যা তাদের শক্তিক্ষয়ের মত সমস্যাসহ মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যাও হতে পারে। তাই টানা কাজের এক ঘেয়েমি থেকে নিজকে মুক্ত করতে বন্ধু-বান্ধব এবং পরিবারের সাথে সময় কাটানো উচিত।
৩.নিজ পরিসরকে ছোট না রাখা:
শিক্ষাবিদরা যতদূর সম্ভব তাদের পরিসর এবং নেটওয়ার্কিংকে বাড়ানোর মাধ্যমে উপকার পেতে পারেন। এটি আপনাকে বর্ধিত সহযোগিতার সুযোগের পথ সুগম করে দেয়, যা আপনার সাথে আপনার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সম্পর্কের সুযোগ তৈরি করবে। আপনি কখন কোন লোকদের সাথে পথ চলবেন বা কে আপনাকে প্রাথমিক ধাপের গবেষক হিসেবে আরো পরামর্শ দিবে- এটি আপনি কখনোই বুঝতে পারবেন না।
৪.কোন ধরনের অতিরিক্ত চাপ না নেওয়া:
চাকরির এই কঠিন প্রতিযোগিতার সাথে অনেক নতুন গবেষক একাধিক ভিন্ন ভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করার প্রয়োজন মনে করেন। তাদের অভিজ্ঞতাকে সমৃদ্ধ এবং অন্যের থেকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য তারা এগুলো করেন । তবে সকল অবস্থাতেই বেশি কথা বলা এড়িয়ে চলতে হবে। এটি আপনার গবেষণার মূল উপাদানকে এমনভাবে প্রভাবিত করে যা আপনার কাজকে নিচু মানে নিয়ে যাবে।
৫.মেন্টরশীপ এড়িয়ে না চলা:
আপনি এখনো আপনার কর্মজীবনের প্রাথমিক পর্যায়ে থাকলেও অনেকেই আপনার দিকে তাকিয়ে থাকবে। এইজন্য রূপকতার সিঁড়ি বাদ দিয়ে এই পেশায় আসা নতুনদের অনুপ্রাণিত করা নিশ্চিত করুন। যেমন: আপনি পরামর্শ দিয়ে প্রবন্ধ লিখতে পারেন, আপনার একজন জুনিয়র সহকর্মীকে সাহায্য করাতে পারেন, এবং আপনার গবেষণাক্ষেত্রের অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা করার জন্য নিয়মিত মিলিত হওয়া যায় এমন একটি গ্রুপ তৈরি করতে পারেন।
৬.প্রারম্ভিক গবেষকদের পরামর্শকে এড়িয়ে না চলা:
আপনি একজন একাডেমিক। তার মানে আপনি কয়েক বছরের উচ্চ শিক্ষা সম্পন্ন করেছেন। কিন্তু আপনি এটা ধারণা করেবেন না যে আপনি সবজান্তা। তাই আপনাকে নতুন দক্ষতা শেখার এবং নতুন অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। এটিই কর্মজীবনে এগিয়ে যাওয়ার একমাত্র উপায়।
৭.পরিপূর্ণতাবাদী না হলেও হবে:
অনেক শিক্ষাবিদই পরিপূর্ণতাবাদী বা পারফেকশনিস্ট। তারা প্রায়ই একই প্রকল্পে ঘন্টাব্যাপী, দিনব্যাপী, সপ্তাহব্যাপী এবং মাঝে মাঝে পুরো মাসব্যাপী কাজ করেন। সঠিকভাবে কাজ সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত তারা বিরতি নেন না। কর্মজীবনের প্রাথমিক ধাপের গবেষকদের পরামর্শের একটি অংশ আছে যা উপেক্ষা করা উচিত। গবেষকরা অকারণেই তাদের অধ্যয়ন নিখুঁত করতে এত সময় ব্যয় করেন অথচ এই সময়টিই তারা অন্য জায়গায় ব্যয় করতে পারতেন।
৮.অন্যের সাথে নিজের তুলনা না করা:
ধরুন, আপনার একজন সহকর্মী একটি ‘সেরা প্রবন্ধ পুরস্কার’ পেলেন কিংবা একটি বিখ্যাত/মর্যাদাপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে নতুন চাকরি পেতে পারেন। তাদের মধ্যে নিজকে অন্তর্ভূক্ত না করা বা তাদের অবস্থানে নিজকে না দেখতে পারাটা অনেক কঠিন কাজ। তবে, যা কিছুই হোক অন্যের সাথে নিজেকে তুলনা করা থেকে বিরত থাকুন। এটি একটি দুর্দশা মাত্র। নিজস্ব গতিতে বা ধারায় এগিয়ে গিয়ে আপনি নিশ্চয়ই আপনার সর্বোচ্চ জিনিসটুকু অর্জন করতে পারবেন।
৯. অতিরিক্ত সময় কাজ না করা:
প্রথাগত ৯ টা – ৫ টা চাকরির বিপরীতে একাডেমিয়ায় অন্তত নমনীয় একটা সময় থাকে। আপনার যখন ইচ্ছা তখনই সুন্দরভাবে কাজ করতে পারবেন। এতে করে সহজেই আপনি আপনার ইচ্ছার থেকেও বেশি কাজ করে শেষ করতে পারবেন। আপনি প্রতিদিন কতটা সময় কাজ করেন তা নির্দিষ্ট করে আপনার কর্ম ও জীবনের মধ্যকার ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে।
১০.ব্যক্তিগত জীবনকে অবহেলা না করা:
আমাদের জীবনে বন্ধু,পরিবার, শখ বা ইচ্ছা এবং ব্যক্তিগত যত্ন- সবকিছুই অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এই সবকিছুই আমাদের জীবনকে সজীব/জীবন্ত রাখে। আপনার জীবনের মূল্যবান মানুষ ও জিনিসগুলোকে সময় দিন এবং যত্ন নিন।
মূল লেখার লিঙ্কঃ https://blog.mdpi.com/2022/11/25/early-career-researcher-advice/
ভাষান্তরঃ মিমযায়ি তাসনিম সাদিয়া রাফি, শিক্ষার্থী, সমাজবিজ্ঞান ও নৃবিজ্ঞান বিভাগ, শান্ত-মারিয়াম ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি
[লেখার সকল দায়বদ্ধতা লেখক নিজে সংরক্ষণ করবেন]