ভূমিকা: সাম্প্রতিক সময়ে জ্ঞান, বিজ্ঞান, চিকিৎসা, সমাজ ব্যবস্থা পরিচালনাসহ প্রায় সকল ক্ষেত্রেই পশ্চিমা আধিপত্য চোখে পড়ে। আর এই আধিপত্যকে একভাবে মেনে নিয়ে পশ্চিমাদের মতো এগিয়ে যাওায়ার চেষ্টা করছে প্রাচ্যের দেশগুলো, প্রাচ্যের দেশগুলো পশ্চিমাদের জ্ঞান গ্রহণ করছে। তাদের অধিনতা স্বীকার করে নিচ্ছে কিন্তু তারপরও পশ্চিম ও প্রাচ্যের মানুষের মাঝে বিভিন্ন বিষয়ে দ্বান্দ্বিক সম্পর্ক বিরাজ করছে। সমাজরে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে এই বিষয়টিও বর্তমানে নৃবিজ্ঞানীদের দৃষ্টি কেড়েছে। নৃবিজ্ঞানীরা দেখিয়েছেন যে, বিদ্যমান এই আপেক্ষিকতা , পার্থক্য সৃষ্টির মূল কারণ হিসাবে ভূমিকা পালন করে আসছে পশ্চিমা ক্ষমতার হেজেমনি, এই প্রতিবেদনে আমি East ও West এর কিছু সাংস্কৃতিক ও মতদর্শিত ভিন্নতা দেখানোর পাশাপাশি কিভাবে প্রাচ্যের মতাদর্শকে প্রভাবিত করছে তা দেখাবো। এখানে আমরা West বলতে পশ্চিম ইউরোপ, আমেরিকা সহ উন্নত দেশ সমূহকে বোঝানো হয়েছে। তবে সাদারাই মূলত West হিসাবে বিবেচিত হয়। এসব অঞ্চলের কালো জনগোষ্ঠীদেরকে পশ্চিমা ভাবা হয় না, তাদের উপরও সাদাদের আধিপত্য রয়েছে। এক্ষেত্রে রাশিয়া West এর মাঝে পড়ে না। West শব্দটি একটি জার্মান শব্দ থেকে এসেছে যার অর্থ করলে দাড়ায় Evening ( সন্ধ্যা) অপর দিকে West শব্দটি Prot- Germanic `aus to’ যার অর্থ দাড়ায় ` East toward the sunrise’ বা Down. প্রথাগত ভাবে মানচিত্রে হাতের ডানে হলো East । মূলত অনুন্নত ও তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোই হিসাবে বিবেচিত। ভৌগলিকভাবে আটলান্টিক মহাসাগরের এপাশকে বোঝানো হয়।
পশ্চিমা আধিপত্য: East এর উপর West এর আধিপত্যের সাথে ক্ষমতা হেজেমরি ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। পশ্চিমারা তাদের জ্ঞানের মাধ্যমে এমন একঘরনের হেজেমনি তৈরী করতে সমর্থ হয়েছে , যার মাধ্যমে তারা বিশ্বের কেন্দ্রে নিজেদের অবস্থান দৃঢ় করতে পেরেছে। পশ্চিমা আধিপত্য ক্ষমতার কেন্দ্রে থাকার একটা বড় কারণ তাদেও সামরিক শক্তি। পশ্চিমাদের মতো সামরিক (Military)শক্তি পূর্বের দেশগুলো আয়ত্ব করতে পারেনি। তাই তারা একভাবে পশ্চিমা আধিপত্যকে মেনে নিয়েছে। ২য় বিশ্ব যুদ্ধের পূর্বে বর্তমানের East বা West এর তুলনায় কম শক্তিশালী ছিল। রাশিয়া ছিল সামরিক দিক দিয়ে শক্তিশালী কিন্তু শশ্চিমা সমাজ তথা ইউরোপ, আমেরিকা দীর্ঘদিন যুদ্ধে লিপ্ত থাকার কারণে তারা নানা ধরনের কৌশল আয়ত্ব করেছে। ফলে দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধে রাশিয়া , জার্মানীর পরাজয় ঘটে এবং একই সাথে ইউরোপ আমেরিকা নতুনভাবে আবির্ভূত হয় এবং এরা ক্ষমতার কেন্দ্রে চলে যায়। এছাড়া দ্বাদশ শতকের দিকে ইউরোপ আমেরিকা তাদের জ্ঞানজগতের যতোটা সমৃদ্ধি আনায়ন করেছে ততোটা অন্যান্য দেশগুলো করতে পারেনি। এসময় ইউরোপ আমেরিকায় অক্সফোর্ড , কেমব্রিজ এর মতো বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হয়। ফলে পশ্চিমা দেশগুলো ধীরে ধীরে জ্ঞানী লোকদের কেন্দ্রস্থলে পরিনত হতে থাকে। আর একই সাথে সারা বিশ্বে জ্ঞান ছড়িয়ে দেওয়ার দায়িত্বও পড়ে একভাবে তাদের উপর। East এ জ্ঞান থাকল্ওে তা পশ্চিমাদের মতে অতোটা বিকশিত হতে পারে নি। West বা তাদের জ্ঞানকে নিজেদের মতো করে সমগ্র বিশ্বে ছড়িয়ে দিয়েছে এবং হেজেনি তৈরীর মাধ্যমে একভাবে বিশ্বের উপর তাদের একক অধিপত্য প্রতিষ্ঠা করছে।
East এর উপর West এর দৃষ্টিভঙ্গিগত পার্থক্য: পশ্চিমা আধিপত্যের কারণে পরোক্ষ ভাবে প্রাচ্যের দেশগুলোর মানুষের দৃষ্টিভঙ্গীর পার্থক্য দেখতে পাই। বিশেষত East VS West এই ডকুমেন্টারিতে গবেষকবৃন্দ বিভিন্ন উদাহরনের মাধ্যমে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। নি¤েœ আমি বেশকিছু বিষয় উদাহরণসহ উপস্থাপন করছি।
১. East এর মানুষেরা যে কোন কিছুর Verb কে গুরুত্ব দেয়, যেখানে West রা Noun কে গুরুত্ব দেয় । একই ভাবে দেখা যায় যে, East রা Singular ও Plural এর মাঝে পার্থক্য করে না কিন্তু তারা পার্থক্য করে।
২. Richard Nisbett দেখান যে East রা Object এর পুরো প্রেক্ষাপট দেখে সেখানে West রা শুধু Individual কে দেখে। D. Park একটি হাতির ছবির উদাহরণ দিয়ে বিষয়টিকে ব্যাখ্যা করেন। সেখানে তিনি দেখান যে West রা শুধুমাত্র হাতিটিকে দেখে আর রা হাতিটিকে সামগ্রিক হিসেবে দেখে। উল্লেখ্য R. Nisbett Universityof Michigan এর মনোবিজ্ঞানের প্রফেসর D. Park এবং একই বিভাগের University of Illiois এর প্রফেসর।
৩. West এর কাছে Individual খুব গুরুত্বপূর্ন সেখানে East দের মাঝে অন্যকে গুরুত্ব দেওয়ার প্রবনতা দেখা যায়। যেমন: West এর বাচ্চারা কি খাবে কি পরবে তা ঠিক করে বাচ্চারা নিজে। আর East এর এই বিষয়গুলো ঠিক করে দেয় তাদের মায়েরা।
৪. West রা যেকোনো বিষয়ে ব্যক্তির নিজস্ব পছন্দকে গুরুত্ব দেয়। বিপরীতে East এর মানুষরা Society কে গুরুত্ব দিয়ে দেখে এবং ঝড়পরধষ Social Pressure কে বিবেচনায় রাখে।
৫. East রা অন্যের সাপেক্ষে নিজেকে দেখে বা নিজেকে অন্যের সাথে তুলনা করে। West অন্যদিকে রা যে কোন সিন্ধান্ত গ্রহনের ক্ষেত্রে নিজস্ব আবেককে গুরুত্ব দেয়। যেটা তার কাছে ভাল মনে হয় সে সেটাই করে। একই সাথে এরা ব্যক্তির যোগ্যতা ও সক্ষমতাকে গুরুত¦ দেয়। West এর Individualist culture মনে করা হয় ব্যক্তি সব কিছু স্বাধীনভাবে করতে পারে। Sharan shavitt দেখান যে আমেরিকার শিক্ষাব্যবস্থা আত্মবিশ্বাস ও আত্মনিয়ন্ত্রনের উপর গুরুত্ব দ্ওেয়া হয়।
৬. West রা তারা যেমন সেটাকেই দেখতে চায়। আর West রা পশ্চিমাদের দেখে তাদের অনুসরণ করে তাদের মতো হতে চায়।
৭. University of Illinois এর অধ্যাপক ED. Diener বলেন Western culture হল Individualistic এখানে Individual খুব গুরুত্বপূর্ণ এর মধ্য দিয়ে তারা Happyness খুজতে চায়। বিপরীতে রা সকল কিছুকে সমষ্টি গতভাবে এবং সম্পর্কিত করে দেখে । ব্যক্তি এখানে পারিপার্শ্বিকতার উপর নির্ভরশীল।
৮. East দের কোন ছবি দেখানো হলে তারা তার Background দেখে পুরো ছবিটাকে বুঝতে চায় আর রা শুধু সেই বিষয়টিকেই বুঝতে চায়। ডকুমেন্টারিটিতে প্রথমেই কিছু ফুল দিয়ে দুটো গ্রুপের মাঝে একটিকে পছন্দ করতে বলা হয়। সেখানে দেখা যায় যে East রা প্রদত্ত ফুলে পুরো অবয়ব এর সাথে মিলে এমন গ্রুপটি পছন্দ করেছে। আর রা করেছে একই ডাটাযুক্ত গ্রুপকে।
অন্য একটি উদাহরনের দুই অংশের বিখ্যাত ব্যক্তিদের ছবি দেখানো হয়। সেখানে দেখা যায় যে এর ব্যক্তিদের ছবিটি আবক্ষ ছবি এবং East এর ব্যাক্তিদের ছবিতে আশপাশের বিষয়ত্ত গুরুত্ব পেয়েছে।
৯. East রা নিজেদেরকে অন্যেও দৃষ্টিভঙ্গীতে দেখে, এখানে Outsiden perspective গুরুত্বপূর্ণ। আর West রা কোন কিছুকে বক্তার Point of View তে দেখে। এখানে Outsiden perspective গুরুত্বপূর্ণ।
East ও West এর মধ্যকার দৃষ্টিভঙ্গীগত পার্থক্যের কারণ বিশ্লেশন: পশ্চিমা দেশগুলো পূর্বেও দেশগুলোর উপর আধিপত্য বিস্তার ও ক্ষমতার চর্চা করছে। কারণ এরা সামরিকভাবে এতো বেশি শক্তিশালী হয়েছে যে এদেও বিরুদ্ধে য্ওায়রা সাহস অনেক রাষ্ট্রই দেখায় না । পশ্চিমারা তাদের সামরিক শক্তির প্রভবে সমগ্র পৃথিবীকে দুটোভাবে ভাগ করেছে। এর একদিকে আছে পশ্চিমাদেশ ও এর সমর্থনকারীরা এবং এর অন্য দিকে আছে পশ্চিমাদেশগুলোর বিরোধীতা কারী দেশগুলো। পশ্চিমাদের বিরোধীতা করলে সেই রাষ্ট্রকেইি হামলা বা যুদ্ধেও সম্মুখীন হতে হচ্ছে। ফলে দেখা যাচ্ছে যে অনেক মুসলিম দেশ পশ্চিমা নীতি দ্বারা ক্ষতিগ্রস্থ হল্ওে তারা পশ্চিমাদেও তথা আমেরিকাকে সমর্থন করছে। মূলত পশ্চিমা রাষ্ট্র তাদের ক্ষমতা ও শক্তির প্রভাবেই সমগ্র বিশ্বের উপর তাদের আধিপত্য বিস্তার করছে। এবার জ্ঞানের কথায় আসা যেতে পারে, জ্ঞান বিজ্ঞান সকল দিক দিয়েই পশ্চিমারা এগিয়ে। কিন্তু এটা এই প্রমান করে না যে, সকল জ্ঞানীরাই পশ্চিমা দেশগুলোতে জন্মে। বরং জ্ঞানী ব্যক্তিরা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে থাকল্ওে তাদেও অধিকাংশকেই পশ্চিমারা তাদের কুক্ষিগত কওে ফেলেছে। ফলে পশ্চিমার দেশ গুলোর বাইরের দেশগুলোর থেকে আগত ব্যাক্তিদেও জ্ঞান্ও একভাবে পশ্চিমা নিয়ন্ত্রনে প্রকাশিত হয়। তাছাড়া পশ্চিমারা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করার মধ্য দিয়ে তাদেও জ্ঞানকে প্রতিষ্ঠা করছে। পশ্চিমা ছাড়া বাকি দেশগুলোর মাঝ্ও অনেক সময় জ্ঞান থাকতে পাওে কিন্তু পশ্চিমা হেজেমনির কারণে আমরা সেইসব জ্ঞানের চেয়ে পশ্চিমা জ্ঞানকেই বেশি গুরুত্ব দেয়। উদাহরণ হিসাবে বিভিন্ন স্থানের স্থানীক জ্ঞনের ও বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। বৈজ্ঞানিক জ্ঞানকে পশ্চিমারা সমগ্র বিশ্বেও জন্য গ্রহনযোগ্য করে তুলেছে । স্থানীক জ্ঞানকে অতোটা গুরুত্ব দ্ওেয়া হয় না কিন্তু অনেক সময়ই স্থানীক জ্ঞানকে একটু সংশোধন করে। বৈজ্ঞানিক জ্ঞান হিসাবে প্রতিষ্ঠা করা হয় তখন সেটি সকলে কাছে গ্রহনযোগ্য হয়। যেমনঃ কাশির চিকিৎসায় তুলসী পাতার ব্যবহার স্থানীক জ্ঞান, কিন্তু একে অনেকেই গ্রহনযোগ্য ভাবে না । কিন্তু এই তুলসী পাতা দিয়েই যখন তসকা ঔষধ তৈরী করা হয় তখন সেটা সকলের কাছে গ্রহনযোগ্য হয়। কারণ সেটা বৈজ্ঞানিক। মূলত ইউরোপ, আমেরিকা তাদের ক্ষমতা ও হেজেমনি দিয়ে সমগ্র বিশ্বেও উপর একধরনের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেছে। যার কারণে অপশ্চিমারা পশ্চিমাদের আধিপত্যকে গ্রহণ করেছে। এবং নানাভাবে এই আধিপত্যকে মেনে নিতে তারা বাধ্য হচ্ছে। পশ্চিমারা তাদের প্রভাব দ্বারা সমগ্র বিশ্বের উপর তাদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেছে। এর মাধ্যমে তারা অপশ্চিমা দেশগুলোর ক্ষেত্রে সমগ্র বিশ্বকে দেখার একটা দৃষ্টিভঙ্গী তৈরী করে দিয়েছে। সেখানেই পশ্চিমাদের সাথে অপশ্চিমাদের প্রধান পার্থক্য যা পশ্চিমাদের করেছে। অধিপতিশীল আর অপশ্চিমা দেশগুলোকে করেছে অধস্তান। পশ্চিমাদের সাথে পূর্বের দেশগুলোর যেসব দৃষ্টিভঙ্গীগত পার্থক্য আছে সেগুলো আমরা আলোচ্য দুটি ডকুমেন্টারীতে দেখেছি। এই দ্বান্দ্বিকতা দৃষ্টিভঙ্গীগত পার্থক্য আপেক্ষিকতা মূলত সৃষ্টি হয়েছে পশ্চিমা আধিপত্যেরর কারণে, কারণ পশিচমারা প্রাচ্যের মানুষদের দ্বারা নিয়ন্ত্রন করছে। তাই বলা যায় যে এই আপেক্ষিকতা ও দ্বান্দ্বিকতার কারণ একভাবে পশ্চিমা ক্ষমতা, আধিপত্য ও হেজেমনি।
উপসংহার: বর্তমান সময়ে পশিমা আধিপত্য বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়েছে। বিশেষত প্রাচ্যেও দেশগুলোর উপর শিক্ষা, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ক্ষেত্র্ইে তাদের আধিপত্যের মাধ্যমে বোঝানোর চেষ্ঠা করেছে। যে প্রাচ্যেও চেয়ে তারা সব দিক থেকে উন্নত, শ্রেষ্ঠ। সুতরাং পাশ্চাত্যেও প্রভাব, আধিপত্যেকে প্রাচ্যকে মেনে চলতে হবে। এর এই আধিপত্যেও কারনে এর মানুজনের মাঝে এক ধরনের দৃষ্টিভঙ্গীগত ও মতাদর্শিক পার্থক্য সৃষ্টি হয়েছে। এই প্রতিবেদনে বিভিন্ন উদাহরনের মাধ্যমে এই বিষয়গুলো দেখানোর চেষ্টা করা হয়েছে। সর্বোপরি বিশ্বকে দেখার দৃষ্টিভঙ্গীতে এর মানুষের দৃষ্টিভঙ্গী ও মতাদার্শিক বিভিন্ন পার্থক্য পার্থক্যের কারণ, পশ্চিমা আধিপত্য ও নৃবিজ্ঞানে এর প্রসঙ্গিকতা এখানে আলোচনা করা হয়েছে।
লেখক: সুমাইয়া হাসিন