সময়টা ২০০১ সালের সেপ্টেম্বর মাসের ১১ তারিখ, মঙ্গলবার। আমি অভ্যাসগতভাবেই তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠলাম। বিছানায় থাকাবস্থায়ই আমি পড়তে এবং লেখতে শুরু করেছিলাম। ম্যানহাটনের মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরে আসলে অপ্রীতিকর কী ঘটছে, সে সম্পর্কে তখনো আমি কিছু জানি না। নিউইয়র্কের কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসে আমাদের উর্ধ্বস্থিত পশ্চিম দিকের অ্যাপার্টমেন্টটি দুরন্ত শহরের কেন্দ্রস্থল এবং বাণিজ্যিক কেন্দ্র থেকে দূরে, শব্দহীন একটি সুন্দর আবাসিক এলাকায় অবস্থিত। এমন দৃশ্য গ্রামীণ স্ক্যান্ডিনেভিয়াও দেখা যায়।
আমার ল্যান্ডলাইনটি হঠাৎ বেজে উঠল। উল্লেখ্য, সেসময়ে হরহামেশা সেলফোনের ব্যবহার ছিল না বা অদ্ভূত ও অস্বাভাবিক ছিল এবং আমরা তখনও যোগাযোগের জন্য পুরনো দিনের ল্যান্ডলাইন ব্যবহার করতাম। ফোনের অপর প্রান্তে ছিল আমার বন্ধু, তাঁর কণ্ঠে উদ্বেগ ছিল। সে জিজ্ঞাসা করলো, আমি ঠিক আছি কিনা। এবং যখন আমি তাকে বললাম, আমি ভালো আছি, তখন সে আমাকে আমার টিভি চালু করার জন্য বললো।
যখন টিভির পর্দা জ্বলে উঠল, আমি দেখলাম যে আমাদের শহর আক্রান্ত হয়েছে। ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের বিশাল-জাঁকালো টুইন টাওয়ারে বিমান আঘাত হেনেছে এবং ভবন দুটো ভেঙে পড়ছিল। মানুষ জীবন বাঁচাতে দৌড়াচ্ছিল। তখন সত্যি কয়টা বাজে, তা আমার মনে নেই – সময়টা যেন চলছিল না।
[দৃশ্যটি দেখে] মুহুর্তেই আমার স্মৃতিপটে ভেসে উঠেছিল একই বছরের ১৫ এপ্রিলের কথা, যেদিন আমি আমার বড় মেয়ে পার্ডিসকে (Pardis) তার জন্মদিন উদযাপন উপলক্ষে উত্তর টাওয়ারের উপরে অবস্থিত উইন্ডোজ অব দ্য ওয়ার্ল্ড (the Windows on the World) রেস্তোরাঁয় নিয়ে গিয়েছিলাম। আমার স্পষ্ট মনে আছে, আমরা কাছাকাছি (টুইন টাওয়ারের নিকটে অবস্থিত) নেওয়ার্ক বিমানবন্দরে (Newark Airport (EWR) বিমানগুলোকে অবতরণ এবং উড্ডয়ন করতে দেখেছি। আমার মেয়েকে বলা কথাও আমি মনে করছিলাম, “এটা কি অদ্ভুত নয় যে আমরা বিমানগুলোকে আমাদের পায়ের নিচে নামতে এবং উড়তে দেখি!”
অর্ধেক অবিশ্বাস আর অর্ধেক হতাশায় আমি [অতিদ্রুত] কাপড় পরে গুটিকয়েক ভীত ব্যক্তির সাথে যেখানে হামলা হয়েছিল, সেই শহরের কেন্দ্রস্থলের দিকে হাঁটা শুরু করলাম। রাস্তাঘাট ছিল ভীষণ ফাঁকা। শহরজুড়ে একটা অদ্ভুত নিস্তব্ধতা বিরাজ করছিল। আমরা নিউইয়র্কবাসী, কোলাহলে আসক্ত। অত্যধিক নীরবতা আমাদের মনে শঙ্কা তৈরি করে। সেইদিন সকালে পুরো শহর খুব শান্ত ছিল। আমি ব্রডওয়ের (Broadway) ভবনগুলো দেখতে শুরু করলাম যেন তারা এমন শিশু যারা মাত্রই তাদের মা-বাবাকে হারিয়েছে; কিন্তু তারা এখনও জানেনা আসলে কি ঘটেছে।
আমিসহ বিভ্রান্ত মানুষের ছোট ভীড়টি হিউস্টন স্ট্রিটে এসে থামলো।
আমি কয়েকজন জাপানি পর্যটককে স্মৃতিচিহ্ন হিসাবে রাস্তায় পার্ক করা গাড়ি থেকে ধসে পড়া টুইন টাওয়ারের ধুলো সংগ্রহ করতে দেখেছি। আর আমি তাজ্জব হয়ে ইট, সিমেন্ট, মাংস, কফির কাপের ধুলো এবং ধ্বংস হয়ে ধুলোয় মিশে যাওয়া স্বপ্নগুলোর কথা ভাবছিলাম।
আমি নিজে নিজেই ওমর খৈয়ামের কবিতা আবৃত্তি করতে শুরু করলাম:
আহ! ধূলোয় মিশে যাওয়ার আগেই,
জীবনকে যতোটা পারা যায় উপভোগ করো,
ধূলো, সেতো স্তুরিভূত ধূলো, ধূলোর নিচেই শয়ন,
মদ, গান, ও গায়ক কেউই থাকবেনা সে জীবনে ।

শোকের মাহাত্ম্য
এই ঘটনার পরদিন বুধবার ছিল আমার ক্লাস নেওয়ার দিন। ক্যাস্পাসে যেয়ে দেখলাম আমার শিক্ষার্থীদের রঙিন চক দেওয়া হয়েছে আর তারা সেগুলো দিয়ে লো [মেমোরিয়াল] লাইব্রেরির (Low Library) সিঁড়ির ধাপগুলোতে তাদের ভয়, দুশ্চিন্তা আর শোকের ছবি আঁকছে।
এই শোক প্রকাশ মৃতদের জন্য নয়; বরং জীবিতদের জন্য। এটি একটি মহৎ জীবন যাপনের জন্য পুণ্যময় শিল্প – মহামূল্যবান জীবনের অনন্তকালে রুপান্তর উদযাপনের পবিত্র অনুষ্ঠান। এটা এমন একটা অবস্থা যখন আমরা মরণশীল মানুষজন আমাদের আত্মার অমরত্ব অনুভব করি। কিন্তু যে সকল সংস্কৃতি শোক জ্ঞাপনের ভাবগাম্ভীর্য সভ্যতা হারিয়ে ফেলেছে, সেগুলোর কী হবে?
আমাদের শহর যে সন্ত্রাসের শিকার হয়েছিল তার জন্য স্থির ধ্যানে থাকতে ও শোক প্রকাশ করতে মানব অন্তঃআত্মার প্রশান্ত ছাউনীতে কেবল এক বা দুই দিনেরই সময় ছিল। এর পরবর্তীতে, আমেরিকানরা তাড়াহুড়ো করে শোকের সেই মহৎ স্থানটি অস্বীকার করে তাদের জন্য দ্রুত তৈরি করা একটি নিরাকার শত্রুর বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিতে ছুটে গিয়েছিল। প্রতিশোধ নেওয়ার আগে মানুষের শান্তি দরকার, তাদের স্থির হয়ে বসে থাকার এবং আমাদের অস্থির পৃথিবীর ভয়কে শান্তভাবে অনুভব করার সময় প্রয়োজন। কিন্তু যুদ্ধের দামামা অতিদ্রুত বেজে উঠল এবং সেই প্রশান্ত ধ্যানগুলোতে ছেদ টানলো।
৯/১১’এর দশম বার্ষিকীতে, আমি আল-জাজিরার জন্য একটি লেখা লিখেছিলাম, যেখানে আমি আমার পাঠকদের সাথে বিশিষ্ট ফরাসি দার্শনিক জ্যাক দেরিদার সাথে আমার একটি সংক্ষিপ্ত আলাপ শেয়ার করেছিলাম, যা ভয়াবহ ঘটনার পরপরই তিনি কলম্বিয়াতে একটি পাবলিক লেকচারের সময় দিয়েছিলেন। সেদিন, দেরিদা “রাজনৈতিক শোক” সম্পর্কে কথা বলছিলেন – তার দর্শকদের বুঝিয়ে দিয়েছিলেন যে আমরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যা দেখছি তা কেবল ৯/১১’র ঘটনায় যারা মারা গিয়েছিল তাদের জন্য শোক নয়, বরং আমরা “রাজনৈতিক” ধারণার শোক করছিলাম যেমনটা আমরা জানি। তার বক্তব্যের শেষে, আমি তাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম যে তিনি কি মনে করেন, আমরা শহরে যে “শোকের রাজনীতি” (“the politics of mourning”) দেখছি তা সম্ভবত “রাজনৈতিক শোক”(“the mourning of the political”)কে রোধ করবে কি না। তিনি প্রশ্নটি নিয়ে চিন্তা করছিলেন, কিন্তু সরাসরি উত্তর দিতে পারেননি। তিনি বলেছিলেন, তার কাছে স্পস্ট কোন জবাব নেই।
আমেরিকানদের এই মর্মান্তিক ক্ষতের জন্য মানবিক অনুভূতি ও শোক প্রকাশ খুব দ্রুতই “শোকের রাজনীতি” এবং যুদ্ধের দামামা দ্বারা ছাপিয়ে গেল। তবে তারা যেটুকু শোক করেছে, তা তাদের যুদ্ধবিমানের পরিসীমার মধ্যেই।
তথাকথিত “সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ” এত দ্রুত এবং সহিংসভাবে ৯/১১’র শোকের রাজনীতিকে ছাড়িয়ে গিয়েছিল যে ভেতরে ভেতরে মর্মান্তিকভাবে আক্রান্ত এই জাতিটি তাদের অভ্যন্তরীণ ক্ষতের কোন ধরনের অনুভূতি প্রকাশ থেকে বঞ্চিত হয়েছিল। [যে সব শোক প্রকাশ করা হচ্ছিল] তার সবই ছিল বাহ্যিক, সবই ছিল হিংস্র প্রতিশোধ – বাস্তবে কি ঘটেছিল তার [সেটা জানার জন্য] কোন অর্থপূর্ণ প্রতিফলনের জন্য কিছুই অবশিষ্ট ছিল না।
[২০১১ সালের] পাঁচ বছর পর, ৯/১১’র ঘটনার ১৫তম বার্ষিকীতে, আমি আল জাজিরার জন্য অন্য একটি নিবন্ধে এই ধারণাটি পুনর্বিবেচনা করেছি। শোকের বিজয়ী রাজনীতি কীভাবে রাজনৈতিক শোকের সম্ভাবনাকে নস্যাৎ করে দিয়েছিল, তা আমি [লেখাটিতে] বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেছি।
আসলে অন্যের ব্যথাকে নিজের মধ্যে ধারণ করার জন্য প্রয়োজনীয় একটি প্রশান্ত স্থানের চাপা কথা বা গুঁজনকে [৯/১১] ঘটনার প্রতিটি যুগান্তকারী বার্ষিকীতে ক্রোধ এবং প্রতিশোধের চিৎকার বা কান্না দ্বারা ছাপিয়ে যায়। অন্যরা যেহেতু আরও বেশি অন্য হয়ে গেছে, তাই এই দেশের কর্তাব্যক্তিরা ভাবছে যে, এই পৃথিবীতে এটি কোথায় তার [দেশটির] অবস্থান দিতে পারে।
কান থেকে কান্দাহার
আমেরিকানরা ৯/১১ এর ঘটনায় যে কস্ট পেয়েছিল, আফগান এবং ইরাকিরা বছরের পর বছর ধরে সেটার পরিণতি ভোগ করেছে। তারা আজও সেই ভয়াবহ দিনের ফলভোগ করছে। কিন্তু ৯/১১’র ঘটনার মতো কেইবা ১০/৭ কিংবা ৩/২০ ‘র কথা মনে রাখে? উল্লেখ্য, ২০০১ সালের অক্টোবরের ১০ তারিখ আমেরিকা আফগানিস্তানে আক্রমণ শুরু করেছিল। আর ২০ মার্চ, ২০০৩ ইং তারিখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইরাক আক্রমণ করেছিল। নিজ ক্ষতিতে শোক প্রকাশের মতো মহৎ কাজ শুরু করার পাশাপাশি অন্যের যন্ত্রণাও কল্পনা করা প্রয়োজন।
সেই সময়কার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং আফগানিস্তানের পৃথিবীকে একসাথে সংযুক্ত করে উপস্থাপনে শিল্পের একটি মৌলিক কাজ রয়েছে।
২০০১ সালের মে মাসে, ইরানের চলচ্চিত্র নির্মাতা মোহসেন মাখমালবাফ কানে তার কান্দাহার শীর্ষক চলচ্চিত্রের প্রিমিয়ার করেন। ছবিটি প্রাথমিকভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে খুব একটা প্রভাব ফেলতে পারেনি। যদিও এটি সমালোচকদের যথেষ্ট প্রশংসা কুড়িয়েছিল। কিন্তু সেই একই বছরের সেপ্টেম্বরে, চলচ্চিত্রটি বিলকুল অপ্রত্যাশিত গুরুত্ব পায়। ৯/১১’র পরপরই ব্যাপক সমাদরের জন্য মাখমালবাফের অনুমতি নিয়ে কান্দাহার ছবিটি আমি কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে দেখিয়েছিলাম।
[ছবিটি দেখানোর মধ্য দিয়ে] কান্দাহার এবং নিউইয়র্ক, এই দুই শহরের মধ্যে নৈকট্য ও সংহতি গঠনের মাধ্যমে নিউইয়র্কের মর্মান্তিক ঘটনাগুলোকে এই অঞ্চলের বৃহত্তর প্রেক্ষাপটে স্থাপন করাই সে সময়ে আমার উদ্দেশ্য ছিল। কিন্তু বলতে গেলে আমার এ চাওয়াটি পুরোপুরি ভেস্তে যায়। কেননা সে সময় দেশটি আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার জন্য প্রস্তুত হচ্ছিল। এটি এমন একটি যুদ্ধ যা রিচার্ড ফকের (Richard Falk) মতো সবচেয়ে উদার এবং প্রগতিশীল আমেরিকানরাও ন্যায়সঙ্গত বলে মনে করেছিল।
২০০১ সালের অক্টোবরে দ্যা নেশন (the Nation) পত্রিকায় প্রকাশিত একটি প্রবন্ধে তিনি লিখেছিলেন, “আমার শৈশব থেকে এখন পর্যন্ত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জড়িত ছিল এমন কোন একটি সরাসরি যুদ্ধকেও আমি সমর্থন করিনি। যদিও আমি মনে করি কসোভোতে ন্যাটো বাহিনীর যুদ্ধ ইতিবাচক ফলাফল এনে দিয়েছে। [তিনি আরো লেখেন] “আমি আফগানিস্তানে এপোক্যালিপটিক সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে [মার্কিন যুক্তরাস্ট্র্রের] যুদ্ধকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর প্রথম সত্যিকারের ন্যায়সংগত যুদ্ধ হিসেবে মনে করি।”
কিন্তু ৯/১১-এর সহিংসতার দৃশ্যপট এপোক্যালিপটিক ছিল না এবং আফগানিস্তানে মার্কিন আক্রমণ ও দখল দেশটির প্রতিহিংসাপূর্ণ স্বভাবের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না, কারণ প্রকৃতপক্ষে রিচার্ড ফক নিজেই ভীত ছিলেন ও ঠাহর করেছিলেন। যুদ্ধগুলো তাদের নিজস্ব সামরিক যুক্তি ও এপোক্যালিপটিক সমাপ্তি বা বিপর্যয়কর সীমা (militaristic logic and apocalyptic ends) তৈরি করে এবং টিকিয়ে রাখে।
আমেরিকান ইতিহাসে প্রচুর জাতীয় ট্র্যাজেডি রয়েছে। গৃহযুদ্ধ থেকে শুরু করে আব্রাহাম লিংকনের হত্যাকাণ্ড পর্যন্ত, একইভাবে গুপ্তপথে জন এফ কেনেডি, মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র এবং ম্যালকম এক্স এর হীনকর হত্যার ঘটনা, আর ৯/১১ এর মর্মান্তিক ঘটনার পুরো প্রক্রিয়া। দেশের ইতিহাসজুড়েই দুঃখ এবং আত্ম-প্রতিফলনের জন্য আমেরিকানদের অনেক সুযোগ ছিল।
“সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ”-এর বিজয়ী সামরিকতা, ৯/১১’র হামলার প্রতিশোধে দুটো দেশকে ধ্বংস করার অমানবিক নিষ্ঠুরতা সেই শূন্য গহ্বর, যা অবশ্যম্ভাবী দিনটি পিছনে ফেলে এসেছিল, তা সমূলে উৎপাটন করে না। বরং এটা শুধু আড়াল করে। এই দেশ কখনই একটি [আদর্শ] জাতিতে পরিণত হবে না যতক্ষণ না এটি তার বন্দুক এবং যুদ্ধবিমানকে অপরের জন্য প্রসারিত করার আগে একটি জাতীয় ট্র্যাজেডির জন্য শোকের প্রজ্ঞা এবং সান্ত্বনা না শিখে। একজন আফগান বা ইরাকি শিশুর জীবনের মূল্য আমেরিকান শিশুর জীবনের ন্যায় হুবহু একই রকম না হওয়া বা মনে না করা পর্যন্ত এমনটি কখনই ঘটবে না। প্রতিশোধ মানুষের মনের মর্মান্তিক ক্ষতকে সারায় না; বরং শুধুমাত্র অস্বীকার করে।
ম্যানহাটন শহর তার জনাকীর্ণতা এবং ব্যস্ততায় স্বাচ্ছন্দ্যে ফিরে এসেছে। ৯/১১ একটি প্রতীকী ইতিহাসের অংশ হয়ে উঠেছে যা মানুষ খুব কমই মনে রাখে। এটা ১৯৪১ সালের ৭ ই ডিসেম্বরের পার্ল হারবার-এর হামলাকে চিহ্নিত করার মতো হয়ে গেছে। স্মৃতি দিবস (Memorial Day) বা শ্রমিক দিবসের (Labor Day) মতো সব স্মরণীয় আমেরিকান ছুটির দিনগুলোকে সোমবারের সাথে সামঞ্জস্য করার মাধ্যমে মানুষদেরকে তাদের নিদারুণ ক্লান্তিকর রুটিন থেকে খানিকটা বিরতি দিতে সপ্তাহখানেক ছুটিতে রুপান্তরিত করা যায়। ৯/১১’র ঘটনা কেবলই একটি বিস্মরণীয়, অপ্রতিরোধ্য ও কর্মেব্যাপৃত মঙ্গলবার হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে, যেদিন একটি স্বল্প সময়ের জন্য এই মানুষজনের আত্মা ভয় পেয়েছিল, যা বিশ্ব সর্বদা ভয় পায়।
……..
এই নিবন্ধে প্রকাশিত মতামত একেবারেই লেখকের নিজস্ব এবং অবধারিতভাবে আল জাজিরার সম্পাদকীয় অবস্থানকে প্রতিফলিত করে না।
……….
হামিদ দাবাশি (Hamid Dabashi) কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইরান অধ্যয়ন এবং তুলনামূলক সাহিত্যের হাগোপ কেভোরকিয়ান (the Hagop Kevorkian) অধ্যাপক। তিনি ১৯৮৪ সালে পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সংস্কৃতির সমাজবিজ্ঞান ও ইসলামিক স্টাডিজে দ্বৈত পিএইচডি অর্জন করেন, তারপরে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পোস্টডক্টরাল ফেলোশিপ করেন। তিনি তাঁর সময়ের সবচেয়ে বিশিষ্ট ফ্রয়েডীয় সাংস্কৃতিক সমালোচক ফিলিপ রিফের (Philip Rieff, ১ ১৯২২-২০০৬) সাথে ক্যারিশম্যাটিক কর্তৃত্ব নিয়ে ম্যাক্স ওয়েবারের তত্ত্বের উপর গবেষণাপত্র লেখেন। অধ্যাপক দাবাশি উত্তর আমেরিকা, ইউরোপ, আরব এবং ইরানের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তৃতা দিয়েছেন এবং পড়িয়েছেন। অধ্যাপক দাবাশি পঁচিশটি বই লিখেছেন, চারটি সম্পাদনা করেছেন এবং আরও অনেকের বইতে অধ্যায় লিখে অবদান রেখেছেন। তিনি ইরান অধ্যয়ন, মধ্যযুগীয় এবং আধুনিক ইসলাম, এবং তুলনামূলক সাহিত্য থেকে বিশ্ব সিনেমা এবং শিল্পের দর্শন (ট্রান্স-নন্দনতত্ব)সহ বিভিন্ন বিষয়ে ১০০ টিরও বেশি প্রবন্ধ, নিবন্ধ এবং বই পর্যালোচনার লেখক। তাঁর বই এবং নিবন্ধগুলো জাপানি, জার্মান, ফরাসি, স্প্যানিশ, ডেনিশ, রাশিয়ান, হিব্রু, ইতালিয়ান, আরবি, কোরিয়ান, ফার্সি, পর্তুগিজ, পোলিশ, তুর্কি, উর্দু এবং কাতালানসহ অসংখ্য ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছে। তাঁর বইয়ের মধ্যে Authority in Islam [1989]; Theology of Discontent [1993]; Truth and Narrative [1999]; Close Up: Iranian Cinema, Past, Present, Future [2001]; Staging a Revolution: The Art of Persuasion in the Islamic Republic of Iran [2000]; Masters and Masterpieces of Iranian Cinema [2007]; Iran: A People Interrupted [2007] অন্যতম। এর পাশাপাশি Dreams of a Nation: On Palestinian Cinema [2006] শিরোনামে একটি ভলিউম তিনি সম্পাদনা করেছেন। অধ্যাপক দাবাশির সাম্প্রতিক রচনাগুলোর মধ্যে Shi’ism: A Religion of Protest (2011), The Arab Spring: The End of Postcolonialism (2012), Corpus Anarchicum: Political Protest, Suicidal Violence, and the Making of the Posthuman Body (2012), The World of Persian Literary Humanism (2012) and Being A Muslim in the World (2013) ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
অনুবাদক:
খলীলুল্লাহ মুহাম্মাদ বায়েজীদ, শান্ত-মারিয়াম ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি’র সমাজবিজ্ঞান ও নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক। আগ্রহের জায়গা- জনসংস্কৃতি, স্মার্টফোন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, ধর্ম ও সেক্যুলারিজম।
ইমেইল: bayezid407@gmail.com